অস্থির বাংলাদেশ। হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, বাংলাদেশের বহু মানুষ স্বাধীনতার আনন্দে উল্লাস করছেন। তবে একই সঙ্গে সেদেশের বহু অংশের ছবিটা কিন্তু মোটেও শান্তির নয়, সেটা অশান্তির। ইতিমধ্যেই সেদেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দুদের উপর শুরু হয়ে গিয়েছে, তেমনই ছবিই উঠে আসছে নেটমাধ্যমে। এবার হিন্দুদের উপর আক্রমণের ছবি নিজের ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরলেন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত, প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তসলিমা নাসরিনের পোস্ট করা বেশকিছু ভিডিয়োতে উঠে এসেছে সেদেশের হিন্দু নাগরিকদের বাড়িঘর, মন্দির ভাঙচুরের ছবি ও ভিডিয়ো। যেখানে বহু হিন্দু-মা বোনেদের কান্নায় ভেঙে পড়তে, হাহাকার দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, যে ভিডিয়ো গুলির মধ্যে একটি খিলগাঁও নন্দীপাড়া বড়বটতলা কালী মনদির রঞ্জন মন্তের বাড়ি বলে জানা যাচ্ছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার হিন্দুদের উপর হামলার ছবি তুলে ধরে তসলিমা নিজের মতামত তুলে ধরে লিখেছেন, ‘জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা হিন্দুর ওপর হামলা করছে। তার মানে এই নয় যে আওয়ামী শাসন ভাল ছিল। সেই আমলেও হিন্দুরা অত্যাচারিত হয়েছে। স্বৈরাচারী গিয়ে সন্ত্রাসী আসে। ইসলামিস্ট গিয়ে ইসলামিস্ট আসে, কেবল মানুষ আসে না।’
আরও একটা ভিডিয়োতে তসলিমা নাসরিন তুলে ধরেছেন কীভাবে ময়মনসিংহের শশী লজের সামনের শ্বেত পাথরের সুন্দর মূর্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে তসলিমা লিখেছেন, ‘জিহাদিরা উপড়ে ফেলেছে ময়মনসিংহের শশী লজের সামনের সেই শ্বেত পাথরের সুন্দর ভাস্কর্যটি। বাংলাদেশটা এদের। সব ধর্মবাদি সরকারের ঔরসে জন্ম হয়েছে এই জিহাদি কুলাঙ্গারগুলোর।’ আরও একটা ছবিতে তসলিমা তুলে ধরেছেন, কীভাবে ‘জিহাদিরা ভেঙ্গে ফেলেছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য।’ কীভাবে কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় মূর্তিভাঙার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সেটি ও তুলে ধরেছেন প্রতিবাদী লেখিকা।
এদিকে বাংলাদেশে স্বাধীনতার নামে উল্লাস করা সেদেশের কিছু জনতাকে দেশের পতাকার পাশাপাশি জেহাদি মৌলবাদী সংগঠনের পতাকাও ওড়াতে দেখা গিয়েছে। সেই ছবি তুলে ধরেও তসলিমা নাসরিনের প্রশ্ন, ‘এই পতাকাটি কি স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা?’
হাসিনা পদচ্যুত হওয়ার পর ভয়াবহ বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরে তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘হাসিনার পতনের পর কোথায় গেল দল বেঁধে দেশের গান গাওয়া ছেলেমেয়েরা, কেউ গণভবনে গিয়েছে চুরি করতে, কেউ জিনিসপত্র ভাঙতে। হিন্দু বিদ্বেষী মুসলিমেরা হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে সারা দেশে, ভাস্কর্য বিদ্বেষী মুসলমানেরা ভাস্কর্য ভেঙ্গে শ্মশান বানিয়ে ফেলেছে সারা দেশ। হাতের কাছে নাস্তিক পেলে সবাইকে গরু জবাই করার ছুরি দিয়ে গলা কাটতো। এই হলো জিহাদি বাঙালি। এই জিহাদি বাঙালি অসভ্য, বর্বর। এরা গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদির যোগ্য নয়।’
একই সঙ্গে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ, মৌলবাদ বিরোধী সরকার গড়ার দাবি তুলেছেন প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।