সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ইউনুসের ব্যর্থতার বিষয়টি উসকে দিয়েছিলেন। সেনা প্রধানের সেই মন্তব্যকে কার্যত 'সমর্থন' করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহণ ও শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। এর আগে সেনা প্রধান ওয়াকার বলেছিলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম, দ্রুত কাজ শেষ করে সেনা বাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নেব। কিন্তু কাজটা দীর্ঘদিন ধরে করে যেতে হচ্ছে। যতদিন না পর্যন্ত একটা নির্বাচিত সরকার আসে, আমাদের এই কাজটি ধৈর্যের সঙ্গে করে যেতে হবে।' সেনা প্রধানের এই মন্তব্য নিয়ে শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নতুন দলের নাম চূড়ান্ত, মাথায় সেই নাহিদ, সারজিস-হাসনাতরা কোন পদে?)
আরও পড়ুন: খিদে বাড়ল চিনের, পদ্মার ইলিশ নিয়ে 'চিন্তা' বাড়বে এপার বাংলার খাদ্যরসিকদের?
অনেকেই দাবি করেন, ইউনুসের অধীনে সরকার যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটাই ঘুরিয়ে বলেছিলেন সেনা প্রধান। এই আবহে তাঁর মত জানতে চাওয়া হলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'সেনাপ্রধান আমার জন্য অনেক উঁচু স্তরের লোক। তিনি একটি বাহিনী চালাচ্ছেন। তিনি কোনও কথা না বুঝে বলেননি। এর ব্যাখ্যা কী, আপনারা জানেন। আমি যতটুকু তাঁকে চিনি, তিনি খুব সোজাসাপ্টা কথা বলার লোক। যা বলার মানুষের মুখের ওপর বলেন।' এরপর অবশ্য সাখাওয়াত বলেন, 'উনি কী বলেছেন না বলেছেন, সেটার ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। তা উনিই দিতে পারবেন। এই নিয়ে আপনারা তাঁকে (সেনাপ্রধান) জিজ্ঞাসা করবেন।' (আরও পড়ুন: এ যেন 'সরকারি দল'! নাহিদদের NCP-র মঞ্চে থাকবেন ইউনুস এবং বাকি উপদেষ্টারা?)
এর আগে সেনাপ্রধান সরাসরি সেইসব মানুষকে সতর্ক করেন, যাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতায় ইন্ধন জোগানোর অপচেষ্টা করছেন এবং বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতিতে শান দিচ্ছেন। এতে যে আখেরে দেশ এবং দেশবাসীরই ক্ষতি হবে, সেকথা স্পষ্ট ভাষায় বলতে দ্বিধা করেননি সেনাপ্রধান। তিনি বলেছিলেন, 'আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি! আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি! আমার অন্য কোনও আকাঙ্ক্ষা নাই। আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা - দেশ এবং জাতিটাকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি গ্রহণ করা। গত সাত-আট মাস ধরে অনেক সহ্য করেছি। যথেষ্ঠ হয়েছে। আমি চাই, দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনা নিবাসে ফেরত আসব।'
তিনি আরও বলেছিলেন, 'আরও একটা জরুরি বিষয়, যেটা আমি ভাবলাম যে আপনাদের সঙ্গে আমি শেয়ার করি। দেশের এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পিছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণটা হচ্ছে যে আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত, একজন আর একজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য! যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, তারা (অপরাধীরা) খুব ভালোভাবেই জানে যে এই সময়ে যদি অপরাধ করা যায়, তাহলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কয়েক মাস আগে পর্যন্তও পুলিশ-সহ যে সমস্ত বাহিনী একত্রে অনেক ভালো-ভালো কাজ করেছে। আজ তারাই কাজ করতে পারছে না। ভয় পাচ্ছে। দেশটাকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে, এই সশস্ত্র বাহিনীর বহু সেনাসদস্য, সিভিলিয়ন সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলিকে অসামরিক-সামরিক সবাই মিলে, এই অর্গানাইজেশনগুলোকে এফেক্টিভ রেখেছে। সেই জন্য আজকে, এত দিন ধরে আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।'