মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে ফের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানলে পড়ল ভারত। বার বার বলা সত্ত্বেও চিত্র না পাল্টানোয় 'জরিমানা' হিসেবে ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন ট্রাম্প। ফলে ভারতের শুল্ক বেড়ে মোট ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
গত বুধবারই ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল এবং অস্ত্র কেনার জন্য ভারতকে ‘জরিমানা’ও দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের বার বার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। এই আবহে মঙ্গলবারই ভারতের উপর ‘উল্লেখ্যযোগ্য’ শুল্ক বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।২৪ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর সেই মতোই বুধবার ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত এগজিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষরও করেছেন ট্রাম্প। আগামী ২৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর করা হবে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোর যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেনাকাটাকারী এবং অর্থ সঙ্কটে থাকা অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধেও ট্রাম্প একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন-সম্পর্কের বরফ গলছে! গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথম চিন সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী, কবে যাচ্ছেন?
বুধবার ভারতের উপর বাড়তি শুল্কের ঘোষণা করে ট্রাম্প বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে ভারত সরকার। তাই ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।' ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক নিয়ে মোট ন'দফা নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। বলা হয়েছে, রুশ সরকারের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে তেল কিনে চলেছে ভারত সরকার। এর ফলে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপবে। এই নির্দেশিকার ২১ দিনের মাথায়, মধ্যরাত ১২টা বেজে ১ মিনিট থেকে নয়া হারে শুল্ক কার্যকর হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসে পৌঁছনো, গুদাম থেকে বের করা ভারতীয় পণ্যের উপর।ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, ভারতের উপর ইতিমধ্যে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, আরও যেমন যেমন তথ্য হাতে পাবেন তিনি, এই নির্দেশিকায় তেমন তেমন রদবদলও ঘটাতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহ ঘোষণা করা হয়, সেক্ষেত্রেও নির্দেশিকায় বদল ঘটাতে পারেন তিনি, যাতে কড়া নীতি কার্যকর করা যায়। এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, 'রাশিয়ান ফেডারেশন অয়েল' বলতে রাশিয়ায় উৎপন্ন অশোধিত তেল, পেট্রোপণ্য, শোধিত হওয়া পণ্য এবং সেখান থেকে রফতানি হওয়া পণ্যকে বোঝানো হয়। তার সঙ্গে যে দেশ বা সংস্থার নাম জুড়বে, তার বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা হবে।'
মঙ্গলবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঙ্কার দিয়েছিলেন, 'বাণিজ্যের জন্য ভারত ভালো সঙ্গী নয়। তারা আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট বাণিজ্য করে। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করি না। তাই ভারতের উপর আমরা ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলাম। কিন্তু আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা বৃদ্ধি করা হবে। কারণ, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে এবং তারা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করছে।' গত বুধবারেই প্রথম ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কারণ হিসেবে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, 'তারা সব সময় রাশিয়া থেকে তাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ কিনেছে এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়ার শক্তির বৃহত্তম ক্রেতা, এমন এক সময়ে যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক তখন এসব কিছুই ভাল লাগছে না। তাই এবার থেকে ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করবে, এবং উপরোক্ত বিষয়ে জন্য একটি জরিমানাও দিতে হবে, যা ১ আগস্ট থেকে শুরু হবে।
আরও পড়ুন-সম্পর্কের বরফ গলছে! গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথম চিন সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী, কবে যাচ্ছেন?
যদিও আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছিল ভারত। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিল সরকার। একইসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানায়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতকে নিশানা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশ ভারতের নিন্দা করছে তারাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গিয়েছে।