'প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সুন্দর কথা বলেন। সন্ধ্যা হলেই আবার সবাইকে বোমা মারেন।' রাশিয়ার প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে ইউক্রেনকে বহু প্রতীক্ষিত ‘প্যাট্রিয়ট মিসাইল’ পাঠানোর ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। ফলে বহা বাহুল্য ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তিক্ততা কাটিয়ে এবার ইউক্রেনের ঢাল হয়ে রাশিয়ার সামনে দাঁড়াচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নিউ জার্সিতে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে ফিরে ট্রাম্প বলেন, 'আমরা তাদের (ইউক্রেন) প্যাট্রিয়ট পাঠাব। ওরা মরিয়া হয়ে এটা চাইছিল।' তবে ইউক্রেনকে ঠিক কতগুলি ‘প্যাট্রিয়ট’ যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, 'আমি সংখ্যার ব্যাপারে এখনও একমত হইনি। কিন্তু ওরা কিছু পেতে চলেছে। কারণ ওদের সুরক্ষার প্রয়োজন।' আগেই হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহে সাময়িক বিরতি নেওয়া হবে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত বদলেছে ট্রাম্প সরকার। জানানো হয়েছে, নতুন একটি চুক্তি হবে, যেখানে ইউক্রেনকে পাঠানো অস্ত্রের জন্য তারা নেটো অর্থ দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, 'ওদের নানা উন্নত অস্ত্র পাঠানো হবে। দাম দিতে হবে ১০০ শতাংশ। এতে আমাদের বাণিজ্যের কাজ হবে।'
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, 'নতুন প্যাট্রিয়ট সিস্টেম ও মিসাইল নিয়ে একটি বহুস্তরীয় চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি।' এই আবহে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'পুতিন সবাইকে চমকে দিয়েছে। কথা ভালভাবে বলছে আর সন্ধ্যা হলেই বোমা মারছে।' দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান তিনি। ইউরোপীয় মিত্ররা যেখানে নিষেধাজ্ঞা বাড়াচ্ছিল, সেখানে ট্রাম্প তা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কিয়েভের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি অস্বীকার করে যাচ্ছে মস্কো। ফলে ট্রাম্পের গলায় ক্রমেই ক্ষোভ বেড়েছে।
রবিবারই রিপাবলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং ডেমোক্র্যাট সেনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল একটি দ্বিদলীয় বিল উপস্থাপন করেছেন যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘স্লেজহ্যামার’ অর্থাৎ মারণ প্রতিষেধের মতো নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ক্ষমতা দেবে। গ্রাহাম বলেন, 'এই বিল ট্রাম্পকে ক্ষমতা দেবে, যে সব দেশ রাশিয়াকে সাহায্য করছে, তাদের উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসাতে।' এই সব দেশগুলির মধ্যে থাকতে পারে চিন, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো রাশিয়ার পণ্য আমদানিকারী দেশগুলি।অন্যদিকে জেলেনস্কি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, 'এটা এমন এক হাতিয়ার যা কূটনীতিকে অর্থবহ করে তুলবে। যুদ্ধ থামানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।'
রবিবারই ব্লুমেনথাল জানান, সোমবার রাতে তাঁরা ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। আলোচনায় ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রাশিয়ার ‘ফ্রোজেন অ্যাসেট’ ইউক্রেনকে দেওয়ার আইনি দিক নিয়েও কথা হবে।এতকিছুর পর রাশিয়া কী পদক্ষেপ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখনও পর্যন্ত এই মর্মে কোনও প্রতিক্রিয়া পুতিনের তরফে পাওয়া যায়নি।