ভাঙড়ের পর এবার মালদা। জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দিয়ে নৃশংস ভাবে খুন হলেন তৃণমূল নেতা। মৃত তৃণমূল নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ। জেলার ইংরেজবাজারের লক্ষ্মীপুরে এক ব্যক্তির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। খুনের অভিযোগ উঠেছে আরেক তৃণমূল নেতা তথা কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মাইনুল শেখের বিরুদ্ধে। ওই অনুষ্ঠানে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তখনই এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া, আহত হয়েছেন আবুলের স্ত্রী শিউলি খাতুন-সহ আরও তিন জন। সকলকেই মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভাঙড়ে শওকত ঘনিষ্ঠ TMC নেতাকে গুলি-কুপিয়ে খুন, ISF-এর দিকে অভিযোগের আঙুল
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত আবুল ও অভিযুক্ত মাইনুল দুই জনেই মানিকচকের গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। তবে সেই পারস্পরিক সম্পর্কেই তৈরি হয়েছিল টানাপোড়েন। বৃহস্পতিবার রাতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে জমি সংক্রান্ত অর্থ লেনদেন ঘিরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা দ্রুত রূপ নেয় হিংসায়। তখন পার্টি চলাকালীন একটি ঘরে আবুলকে কুপিয়ে খুন করে মাইনুল। সেই সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হন আরও কয়েক জন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য মাইনুল শেখকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তদন্তে উঠে এসেছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। জানা গিয়েছে, মাইনুল এক সময় ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। তৃণমূলের টিকিটে জিতলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে জয়ের পরে ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন। জেলা রাজনীতিতে তাঁর উপরিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ বহুদিনের। স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রায় নয় বিঘা জমির মালিকানা ও টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদই এই রক্তাক্ত ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে। তৃণমূলের ইংরেজবাজার ব্লক সভাপতি প্রতিভা সিংহ জানান, মাইনুলের নামে বহু অভিযোগ ছিল, তাই দলের টিকিট দেওয়া হয়নি। কে বা কারা আবার দলে এনেছে, তা তিনি জানেন না। তাঁর দাবি, মাইনুলের কোনও সাংগঠনিক ভূমিকা বা ক্ষমতা নেই, টাকার জোরেই এ বার জিতেছেন তিনি।
অন্যদিকে, জেলা সভাপতি জানান, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। কে দলে, কে নয় তা পুলিশ তদন্ত করে জানুক। এদিকে, বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে শাসকদলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, তৃণমূল এখন দুর্নীতিবাজ, দালালদের আশ্রয়স্থল। নিজেদের মধ্যেই এখন জমির মুনাফা ভাগ নিয়ে খুনোখুনি চলছে। এটা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই চূড়ান্ত প্রতিফলন।