পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডিতে রেললাইনের ধারে উদ্ধার হওয়া মা ও দুই কন্যার রহস্যমৃত্যুর নয়া মোড়। খুনই করা হয়েছে তিনজনকে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। খড়গপুর রেল পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তিনজনকেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। পরে দেহ রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয় দেহ। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা, তা নিয়ে জল্পনা থাকলেও ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টে উঠে এসেছে দেহে ট্রেনের ধাক্কার কোনও প্রকৃত চিহ্ন নেই।
আরও পড়ুন: রেললাইনে পড়ে মহিলা ও ২ নাবালিকার দেহ, খুন নাকি অন্যকিছু! চাঞ্চল্য পুরুলিয়ায়
ঘটনা ঘটেছে সোমবার ভোরে সুইসা ও তোরাং স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায়। মৃতদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের নাম, কাজল মাছুয়া (২৫) এবং তার দুই মেয়ে, সাত বছরের রাখি ও ১৩ বছরের রাধা। রেললাইনের ধারে তিনটি দেহই উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। রাখির ফ্রকের অংশ তার গলায় শক্ত করে পেঁচানো ছিল, কাজলের মুখে নখের আঁচড়ের একাধিক দাগ, আর রাধার মুখে ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। তদন্তকারীদের ধারণা, অন্যত্র খুন করে পরে দেহ রেললাইনে রেখে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছিল।
রেল পুলিশের অনুমান, প্রথমে রাধার দেহ রেললাইনে রাখা হয়, কিন্তু সেই মুহূর্তে একটি পণ্যবাহী ট্রেন চলে আসে। ফলে কেবল তার হাতেই ট্রেনের ধাক্কার চিহ্ন মিলেছে। পরে সুযোগ বুঝে তিনটি দেহ একসঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়, যাতে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হয়। কিন্তু ঘটনার ধরণ ও আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরই রেললাইনে ফেলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজলের স্বামী অজয় মাছুয়া পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক, মুম্বইয়ে নির্মাণ কাজে যুক্ত। কয়েক দিন আগে শ্বশুরবাড়ি সুইসা থেকে তিনি মুম্বইয়ে ফিরেছিলেন। তবে রবিবার রাতে বা সোমবার ভোরে কী ঘটেছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অজয়ের বাড়ি বাঘমুন্ডির জিলিং গ্রামে হলেও স্ত্রী প্রায়শই বাপের বাড়িতে থাকতেন। ঘটনার সকালে তিনিই প্রথম শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন এবং পরে ঘটনাস্থলে যান। তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পারিবারিক অশান্তি নাকি অন্য কোনও সম্পর্কের জেরে এই খুন হয়েছে কি না। পরকীয়ার সম্ভাবনাসহ সব দিকই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের যৌথ তদন্ত চলছে।