রাজ্যে আবারও খুন তৃণমূল নেতা। এবার ঘটনাস্থল বাঁকুড়ার সোনামুখী। দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় বুথ আহ্বায়ক সেকেন্দার খাঁ ওরফে সায়ন খাঁ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সোনামুখী থানার চকাই গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পখন্না বাজার থেকে মোটরবাইকে একাই বাড়ি ফিরছিলেন সায়ন। চকাই গ্রামে ঢোকার মুখে একটি সেচ খালের ধারে আচমকাই পিছন থেকে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। মাথা ও পিঠে একাধিক গুলি লাগায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর আততায়ীরা দ্রুত এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। (আরও পড়ুন: আরজি করের নির্যাতিতার মায়ের ওপর পুলিশি প্রহার নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের বাবার)
আরও পড়ুন: কোন্নগরে TMC নেতা খুনে গ্রেফতার ‘বাম আমলের ত্রাস’ কুখ্যাত গ্যাংস্টার বাঘা
খবর পেয়ে সোনামুখী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠায়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই হাসপাতালে হাজির হন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুব্রত দত্ত, সোনামুখীর পুরপ্রধান সন্তোষ মুখোপাধ্যায়, উপপুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়-সহ দলের একাধিক স্থানীয় নেতা। (আরও পড়ুন: কলকাতার হোটেল থেকে উদ্ধার BSF জওয়ানের মৃতদেহ, ময়নাতদন্ত হবে আরজি কর হাসপাতালে)
আরও পড়ুন: বৈঠক হল হুমায়ুন-অভিষেকের, বকুনি তৃণমূল সেনাপতির, রহস্য বাড়িয়ে বার্তা বিধায়কের
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সায়ন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাবশালী সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে বহুদিন ধরেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছিল এবং সোমবার রাতে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। তাঁদের দাবি, ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সোনামুখী আসনে নিশ্চিত হার দেখতে পেয়ে বিজেপি, সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে। সায়ন দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন, তাই তাঁকে টার্গেট করা হয়েছে। তবে বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এই হত্যার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। (আরও পড়ুন: ১৪ বছর বয়সি বাংলাদেশিকে মহারাষ্ট্রে ধর্ষণ ২০০ জনের, ধৃত ওপার বাংলার একাধিক দালাল)
উল্লেখ্য, গত এক বছরে সোনামুখী ব্লকের চকাই গ্রাম বারবার রাজনৈতিক গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে। চলতি বছরের ২ মার্চ এখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক স্থানীয় নেতা আহত হয়েছিলেন। তার মাত্র ছ’মাসের মাথায় ফের রক্ত ঝরল একই গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও, তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। সায়নের হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে তাঁর পরিবার ও অনুগামীরা।