ইমেয়েনে ধৃত কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দেওয়া হল। জানা গিয়েছে, ভারতীয় আধিকারিকরা ধারাবাহিক ভাবে স্থানীয় জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। এছাড়াও প্রসিকিউটরের অফিস ও হুথি গোষ্ঠীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে ভারত। এই আবহে জানা যাচ্ছে, নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড আপাতত পিছিয়ে দিয়েছে হুথি গোষ্ঠী। এদিকে জানা গিয়েছে, ভারতের সুন্নি মুসলিম নেতা কাঁথাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার নিমিশা প্রিয়ার মামলায় হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি 'ভারতের গ্র্যান্ড মুফতি' নামে পরিচিত।
এর আগে জানা গিয়েছিল, ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে ১৬ জুলাই। ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আবদো মেহদিকে হত্যার দায়ে ৩৭ বছর বয়সি নিমিশা প্রিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই আবহে ভারত সরকার যাতে তাঁর জীবন বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করে, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। তবে সরকার জানিয়েছিল, তাদের হাতে আর কিছু নেই। তবে শেষ পর্যন্ত কূটৈতিক ভাবে আপাতত নিমিশার মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে ভারত।
উল্লেখ্য, ইয়েমেনের এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের কারাগারে রয়েছেন প্রিয়া। এই আবহে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। তারা এই কেসে সমস্ত বিকল্প খতিয়ে দেখেছে। এদিকে নিমিশার হাতে খুন হওয়া ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আবদো মেহদির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে সেই দেশে যান ভারতের সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম ভাস্করন।
নিমিশা প্রিয়া ছিলেন কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসে। এদিকে ২০১৬ সালে ইয়েমন থেকে যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সেই সময় ইয়েমেনের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখানেই তলাত আবদো মেহদির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়ার।
পরবর্তীতে প্রিয়াকে মেহদি একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কারণ ইয়েমেনে কোনও বিদেশি নাগরিক যদি ক্লিনিক খুলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় কারও সঙ্গে পার্টনারশিপে তা খুলতে হবে। সেই কারণেই মেহদিকে প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। এই আবহে ২০১৫ সালে মেহদির সাহায্যে ক্লিনিক খোলে প্রিয়া।
পরে মেহদির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রিয়ার। মেহদি প্রিয়ার থেকে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এর জেরে সেই দেশেই আটকে পড়েন তিনি। এদিকে প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিত মেহদি। এর জেরে মুসলিম দেশে পুলিশের সাহায্যও পায়নি প্রিয়া। নানান ভাবে প্রিয়াকে অত্যাচারও করত মেহদি। পরে কোনও ভাবে প্রিয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেহদির নামে।
২০১৬ সালে গ্রেফতারও হয় মেহদি। পরে অবশ্য সে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মেহদিকে ঘুম পাড়ানো ইনজেকশন দেয় প্রিয়া। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, লুকিয়ে রাখা পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। তবে সেই ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মেহদির। প্রিয়া এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে মেহদির দেহটি কেটে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে রেখে তারা পালায়।
পরে ২০১৮ সালে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। পরে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান নিমিশা প্রিয়া। ২০১৮ সাল থেকে আদালতে লড়াই চালাচ্ছিলেন প্রিয়া। অবশ্য সেদেশের শীর্ষ আদালতেও সেই মামলায় হেরে যান প্রিয়া। এই আবহে গত জানুয়ারি মাসেই প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন দিয়েছিলেন ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি।