সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা নগদকাণ্ডে কাঠগড়ায় ওঠা ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার। তাঁর অপসারণের সুপারিশ করে যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছিল, সেই রিপোর্টকেই চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন বিচারপতি ভার্মা। বৃহস্পতিবার তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ফলে সংসদ বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে পারবে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি এজি মাসিহের বেঞ্চ জানিয়েছে, ইন-হাউস কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এবং তদন্তের রীতি আইনবিরুদ্ধ নয়। আদালত জানায়, 'সিজেআই ও ইন-হাউস কমিটি সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে কাজ করেছে। তদন্ত চলাকালীন ছবি ও ভিডিও আপলোড না করায় কোনও ত্রুটি হয়নি। আর তা নিয়েই তখন কোনও আপত্তিও তোলা হয়নি।'একইসঙ্গে আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে, প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো চিঠি সংবিধানবিরুদ্ধ নয়। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, 'আমরা কিছু পর্যবেক্ষণ রেখেছি, যেখানে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আপনি বিষয়টি নতুন করে তুলতে পারেন।'
সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার কাছে আর কোনও আইনি পথ খোলা রইল না।কারণ এদিন শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আদালতের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া সাংবিধানিক কাঠামোর অন্তর্গত, যা বিচারবিভাগের নিজস্ব সিদ্ধান্তের মধ্যেই পড়ে।গত ৩০ জুলাই মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত। বিচারপতি ভর্মার নগদ উদ্ধার কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের ইন হাউস কমিটির তদন্ত শুরু করে। গঠিত হয় ৩ সদস্যের কমিটি। গত ৩ মে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। দাবি করা হয়, বিচারপতি ভর্মার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পেয়েছে ওই তদন্ত কমিটি। সেই প্রমাণের ভিত্তিতেই ওই তদন্ত কমিটি বিচারপতির অপসারণের সুপারিশ করেছে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ওই সুপারিশের পর কমিটির ক্ষমতা এবং যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মা। শীর্ষ আদালতে তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে সেটা আইন মেনে হয়নি। তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা, সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় লঙ্ঘন করে। পাল্টা বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, যখন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তখন কেন আপত্তি করা হয়নি? তাতে বিচারপতির আইনজীবী উত্তর দেন, উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ কার, তা জানার জন্য বিচারপতি বর্মা তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন। অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই বিরোধী দল এবং সরকারি দলের ১৪৫ জনেরও বেশি সাংসদ বিচারপতি ভর্মা এবং নগদ অর্থ লেনদেনের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে একটি নোটিশ জমা দিয়েছেন। ইমপিচমেন্ট হলে যশবন্ত ভর্মা হবেন স্বাধীন ভারতের প্রথম হাইকোর্টের বিচারপতি যাঁকে এই পদ্ধতিতে অপসারণ করা হবে।
ঘটনার সূত্রপাত
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত ভর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে।