জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে রাস্তায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন হন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পিন্টু চক্রবর্তী। সেই ঘটনার তদন্তে মূল মাথা হিসেবে উঠে এল এক পুরনো নাম, বাঘা। একদা বাম আমলে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানো কুখ্যাত গ্যাংস্টার বাঘাকে রবিবার গ্রেফতার করল পুলিশ। বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হল।
আরও পড়ুন: কোন্নগরে TMC নেতা খুনে ধৃত কুখ্যাত দুষ্কৃতীর ভাই-সহ ৩, জমিজমা নিয়েই কি হত্যা?
ঘটনার সূত্রপাত হয় জমি নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতে মতানৈক্য থেকে। একটি সংস্থার জমি বিক্রি ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে পঞ্চায়েত। অধিকাংশ সদস্য বিক্রির পক্ষে থাকলেও বিরোধিতা করেন পিন্টু চক্রবর্তী। এমনকী ডানকুনির একটি জমি নিয়ে তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারদের বিরোধও চলছিল। অভিযোগ, সেই বাধা সরাতেই ঠিক হয় তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে তাঁর এক ব্যবসায়িক পার্টনার। ঘটনার দিন ছিল বুধবার। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ কোন্নগরের কানাইপুরে নিজের অফিস থেকে বাইকে ওঠার মুহূর্তে পেছন থেকে আচমকা কাটারি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’জন। শুরু হয় এলোপাথাড়ি কোপ। রাস্তায় ছটফট করতে থাকা পিন্টুর উপর নৃশংসভাবে চালাতে থাকে কোপের পর কোপ। সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন কিছু না বুঝে ওঠার আগেই আতঙ্কে হতবাক হয়ে পড়েন। এরপর দুষ্কৃতীরা হেঁটে চলে যায় ঘটনাস্থল থেকে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজে দেখা যায়, খুনের দিন বিকেলেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল দুই অপরিচিত ব্যক্তি বিশ্বজিৎ প্রামাণিক ও দীপক মণ্ডল। ফুটেজ ও মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে দু’জনকে বারাসত ও শাসন থেকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় উঠে আসে তৃতীয় নাম বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশা। তিনি নিহত পিন্টুর পুরনো ব্যবসার সঙ্গী। তিনিই নাকি ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিলেন। বিশার বাড়িতে ঘটনার দু’দিন আগে আশ্রয় নেয় বিশ্বজিৎ ও দীপক। সেখান থেকেই তারা এলাকায় রেকি করে। হত্যার পরে ওই দু’জনকে স্কুটারে স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিল বিশা নিজেই। তদন্ত এমনটাই জানা যায়। এই তিনজনের পর রবিবার পুলিশের জালে ধরা পড়ে বহু চর্চিত নাম বাঘা। পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাঘা, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছর বাদে এলাকায় বাঘার নাম শুনে ফের আতঙ্কের ছায়া। একসময় যে নাম ভয় তৈরি করত, ফের সেই নামই ফিরে এসেছে এলাকায়।