নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে পাক নেতাদের যুদ্ধ এবং পরমাণু আক্রমণের ফাঁকা হুমকির ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শান্তিপূর্ণ বার্তা দিয়ে ভারতের কাছে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকার পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান পর্যটক-সহ মোট ২৬ জন। জম্মু ও কাশ্মীরে ওই সন্ত্রাসী হামলায় পর ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে ভারত।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাসিন্দাদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির বলেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তান যদি অস্তিত্ব সঙ্কটের সম্মুখীন হয়, তাহলে তারা সর্বনাশা শক্তি দিয়ে প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত থাকবে।মুনির বলেন, 'আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি আমরা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছি, তাহলে আমরা আমাদের সঙ্গে অর্ধেক বিশ্বকে ধ্বংস করে দেব।' সেসবের মাঝেই আবার বড় দাবি করেন পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।জানা যায়, বিলাওয়াল সোমবার ভারতের বিরুদ্ধে আরও এক দফা যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। তিনি নাকি জানিয়েছিলেন, নয়া দিল্লি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে, জল নিয়েই যুদ্ধ বাঁধবে। তারপরেই ভারতের কাছে পাকিস্তানের সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে আবেদন কূটনৈতিক মহলে বিস্ময় তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের আবেদন
সোমবার পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ভারতের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে অবিলম্বে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে। এক্স পোস্টে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা ভারতকে অনুরোধ করছি অবিলম্বে সিন্ধু জল চুক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে এবং এই চুক্তির সব শর্ত পূর্ণ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে।' পাকিস্তান আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা’ বলে স্বাগত জানিয়ে আরও জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলি—চেনাব, ঝেলাম এবং সিন্ধু-এর জল প্রবাহিত রাখতে হবে যাতে পাকিস্তান তা অবাধ ব্যবহার করতে পারে।তারা দাবি করেছে, ভারতের তৈরি নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির ডিজাইন 'চুক্তির নির্দিষ্ট শর্ত' অনুসারে হতে হবে, ভারতের নিজস্ব ‘আদর্শ’ বা ‘সেরা চর্চা’ অনুযায়ী নয়।
ভারতের অবস্থান
ভারতের তরফে বলা হয়েছে, পাকিস্তান বারবার চুক্তির অপব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মহলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে দেওয়া হয়েছে রাবি, সাতলুজ এবং বিয়াস নদীর পূর্ণ অধিকার এবং পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর অধিকার।কিন্তু পাকিস্তান ভারতের হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে গড়ে ওঠা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিজাইন নিয়ে বারবার আপত্তি জানিয়ে থাকে।এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার পর, ভারত চুক্তির কার্যকারিতা ‘অস্থায়ীভাবে স্থগিত’ রাখে এবং জানায়, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা দেশের সঙ্গে আর কোন ‘বিশ্বাসভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি’ বজায় রাখা সম্ভব নয়।
তবে এই শান্তিপূর্ণ অনুরোধের আগে ও পরে, পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের মুখে উঠে এসেছে চরম যুদ্ধংদেহী বক্তব্য। একদিকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি, অন্যদিকে সিন্ধু জল চুক্তির আবেদন-এই দ্বিচারিতা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান বর্তমানে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে।চিন এবং মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক সহায়তা ব্যাহত, আইএমএফ-এর কড়া শর্ত, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পাকিস্তান চায় ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা না বাড়িয়ে বিশ্বমঞ্চে ‘শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিতি বজায় রাখতে।সেই কারণেই একদিকে আগ্রাসী বক্তব্য, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ অনুরোধ—দুটিই কৌশলগত চাল হতে পারে।