ঝাড়গ্রামে ডিএলএডের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম দিনের পরীক্ষায় বড়সড় অস্বস্তি তৈরি হল প্রশ্নপত্র নিয়ে। মঙ্গলবার ননীবালা বয়েজ হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসা ৪৪ জন সাঁওতালি ভাষার পরীক্ষার্থী অলচিকি লিপিতে প্রশ্ন না পাওয়ায় পরীক্ষাই দিলেন না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সমাধান না মেলায় তাঁরা সাদা উত্তরপত্র জমা দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষাকে অপমান, ঝাড়গ্রামে ভাষা আন্দোলন, জঙ্গলমহলে প্রতিবাদ কর্মসূচি মমতার
ঘটনার সূত্রপাত হয় পরীক্ষা শুরুর পরই। সাঁওতালি মাধ্যমে পড়া পরীক্ষার্থীরা আশা করেছিলেন যে তাঁদের মাতৃভাষা অলচিকিতে প্রশ্নপত্র থাকবে। কিন্তু বাস্তবে প্রশ্ন এসেছে শুধুমাত্র বাংলা ও ইংরেজিতে। ফলে প্রথম থেকেই বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ দেখা দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে উত্তর খোঁজার চেষ্টা হলেও কোনও উদ্যোগ না হওয়ায়, শেষমেশ পরীক্ষার্থীরা একযোগে পরীক্ষা বয়কট করেন। পরীক্ষা শেষে ওই ৪৪ জন পরীক্ষার্থী ঝাড়গ্রামের পাঁচমাথা মোড়ে গিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি। অবরোধ ও স্লোগানে সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা। প্রতিবাদকারীদের প্রশ্ন ২০০৩ সালে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে স্থান পাওয়া সাঁওতালি ভাষায়, বিশেষ করে অলচিকি লিপিতে, প্রশ্নপত্র তৈরি করতে এত অবহেলা কেন?
আদিবাসী শিক্ষাবিদদের একাংশের দাবি, সাঁওতালি ভাষায় স্কুল থেকে কলেজ সব জায়গায় পড়াশোনা চালু হলেও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয়। এরকম ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা অলচিকিতে পড়েছেন। বাংলা বা ইংরেজিতে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা সরাসরি তাঁদের সঙ্গে অন্যায়। পরীক্ষাকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন দফতরে পাঠানো হয়েছে এবং কীভাবে এই ভুল হল তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এই ৪৪ জনের জন্য পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি শিক্ষা অধিকার রক্ষা মঞ্চের ঝাড়গ্রাম জেলা আহ্বায়ক সিরজন হাঁসদা বলেন, সাঁওতালি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্র না দেওয়া মানে শিক্ষাব্যবস্থার উপর এক কালো দাগ। এর তীব্র নিন্দা করে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন তিনি।