কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার সময় প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন।এমনই মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। রাহুলের অভিযোগ ঘিরে তীব্র বিতর্ক দানা বেধেছে জাতীয় রাজনীতিতে। শুরু হয়েছে তরজা। রাহুলের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
রাহুল গান্ধীর বিস্ফোরক অভিযোগ
সম্প্রতি দিল্লিতে এক আইন সংক্রান্ত আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, 'কৃষি আইনের বিরোধিতা করায় তাঁকে ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন অরুণ জেটলি। রাহুলের অভিযোগ, 'আমি যখন কৃষি আইন নিয়ে লড়ছিলাম, তখন জেটলিজি, যদিও এখন আর তিনি নেই, তাই বলা উচিত নয়, আমার কাছে এসে বলেছিলেন, সরকারের বিরুদ্ধে গেলে, তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ আমি তাঁকে বলেছিলাম, আপনি ভুল লোককে ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা কংগ্রেসের লোক। ব্রিটিশরা পারেনি আমাদের ভাঙতে, আপনারাও পারবেন না।’ রাহুলের এই মন্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।তারপরেই প্রশ্ন ওঠে কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য নিয়ে। কারণ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট দিল্লি এইমসে প্রয়াত হন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তারও প্রায় বছরখানেক পরে ২০২০ সালের জুন মাসে সংসদে পেশ হয় বিতর্কিত কৃষি বিল। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিল পাশ হয়ে তৈরি হয় কৃষি আইন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, মৃত্যুর পর অরুণ জেটলি কী করে কৃষি আইন নিয়ে রাহুলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন?
অরুণ জেটলি পুত্রের ক্ষোভ
এই আবহে কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর ছেলে রোহন জেটলি। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কৃষি আইন মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়ার প্রায় এক বছর আগেই জেটলির মৃত্যু হয়। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘রাহুল গান্ধী এখন দাবি করছেন যে আমার প্রয়াত পিতা অরুণ জেটলি কৃষি আইন নিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন।আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমার পিতা ২০১৯ সালে প্রয়াত হয়েছেন। কৃষি আইন ২০২০ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল। আরও গুরুত্বপূর্ণ, আমার পিতার স্বভাবে কাউকে বিরোধী মতের জন্য হুমকি দেওয়া ছিল না। তিনি ছিলেন একজন দৃঢ় গণতন্ত্রী এবং সবসময় ঐকমত্য গঠনের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। যদি এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হতো, যা রাজনীতিতে প্রায়ই হয়, তিনি মুক্ত ও খোলা আলোচনার আমন্ত্রণ জানাতেন যাতে সবাই মিলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায়।এটিই ছিল তাঁর স্বভাব এবং এটিই আজ তাঁর উত্তরাধিকার।' রোহান আরও বলেন, 'আমি রাহুল গান্ধীকে অনুরোধ করব, যারা আমাদের মাঝে নেই, তাঁদের সম্পর্কে কথা বলার সময় সতর্ক থাকুন। তিনি এর আগেও মনোহর পার্রিকারজির সঙ্গে একই ধরনের কাজ করেছিলেন, তাঁর শেষ দিনগুলোকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যা সমানভাবে খারাপ স্বাদের পরিচয় দেয়।'
বিজেপির তীব্র সমালোচনা
রাজনৈতিক স্বার্থে প্রয়াত নেতাদের নাম ব্যবহারের জন্য রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনায় মুখর বিজেপি। তাদের দাবি, কংগ্রেস নেতা মিথ্যাচারের করছেন।রাহুলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির আইটি সেলে প্রধান অমিত মালব্য। তিনি রাহুলের বক্তব্যকে ‘ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করেছেন।তিনি বলেন, অরুণ জেটলি তাঁর (রাহুল গান্ধীর) কাছে গিয়েছিলেন এমন মন্তব্য ভুল এবং বিভ্রান্তিকর। অন্যান্য বিজেপি নেতারাও রাহুলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কংগ্রেস। হাত শিবিরে লোকসভার চিফ হুইপ মানিকম টেগোরের সাফাই, রাহুল আসলে জমি অধিগ্রহণ আইনের প্রসঙ্গে ওই কথা বলেছেন।