প্রতি বছর ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা জলে ভেসে যায় উত্তরবঙ্গের একাংশ। তাই দীর্ঘ দিন ধরে ভুটান থেকে উত্তরবঙ্গে নেমে আসা নদীগুলির প্রভাব মোকাবিলায় ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু সেই দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ইন্দো ভুটান রিভার কমিশন কী কেন্দ্র করছে? জবাবে জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন গঠন করার কোনও পরিকল্পনা নেই। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সি.আর পাতিল এই জবাব দিয়েছেন।এই প্রসঙ্গে সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে সব জায়গার জন্য রাজ্য সরকার ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন তৈরি করতে বলেছেন, সেখানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখন ডিনায়েল মুডে রয়েছে। বাংলা ডুবে গেলে ওদের কিছু আসে-যায় না। রিভার কমিশন তৈরি না হলে রায়ডাক, সঙ্কোশ, তোর্সা নদীর জলে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের জায়গাগুলি ডুবে যাবে। তাই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ বিজেপিকেও ডুবিয়ে দেবেন।’
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কমিশন গঠনের অনুরোধ করেছিলেন। এমনকী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ১৬৯ ধারা মেনে এই প্রস্তাব পাশ অবধি হয়। প্রস্তাবে রাজ্যের দাবি ছিল, কমিশনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন প্রতিনিধি রাখা হোক যাতে নদী সংক্রান্ত সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান বার করা যায়। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে ওই কমিশনে রাখার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতেও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, আপাতত কমিশন গঠনের বদলে ভুটানের বৃষ্টির জল এবং নদীর জল বেড়ে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের সীমানায় ঢুকে পড়ায় দু’দেশের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তিনটি কমিটির নামও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘জয়েন্ট গ্রুপ অফ এক্সপার্ট’ (জেজিই), ‘জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিম’ (জেটিটি) এবং ‘জয়েন্ট এক্সপার্ট টিম (জেইটি)’, এই কমিটিগুলি বৈঠক করে বন্যা এবং নদীর বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নবাণ
অন্যদিকে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে? তার ভবিষ্যৎই বা কী? একই সঙ্গে ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপানোর বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রেখেছিলেন তিনি। সেই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মার্চে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে।
অভিষেক আরও জানতে চেয়েছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ শুল্কের জেরে দেশের রফতানি বাণিজ্যে কতটা প্রভাব পড়বে তার কি কোনও মূল্যায়ন করা হয়েছে? বিশেষ করে, বস্ত্র, ওষুধ এবং বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রগুলিতে কতটা প্রভাব পড়বে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার সময় শুল্ক অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত বাধা নিয়ে কি কোনও প্রশ্ন করা হয়েছিল? যদি না করা হয়ে থাকে, তার কারণও জানাক সরকার।জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, গত ৭ আগস্ট থেকে ভারতের রফতানি করা কয়েকটি দ্রব্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৭ আগস্ট থেকে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা রয়েছে। তবে ওষুধ এবং বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রে কোনও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের ফলে কতটা প্রভাব পড়ছে, তা জানার জন্য দেশের রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে।