পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের সুইসা গ্রামে মা, মেয়ে ও মাসিকে খুনের ঘটনায় তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে সম্পর্কের তিক্ততার নতুন এক দিক। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত তরুণী কাজল মাছুয়ার সঙ্গে এক যুবকের ঘনিষ্ঠতা থেকেই এই রক্তাক্ত পরিণতির সূত্রপাত হতে পারে।
আরও পড়ুন:খুন করে দেহ ফেলা হয় রেললাইনে, পুরুলিয়ায় মা-২ মেয়ের মৃত্যুতে উঠে এল তথ্য
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে ওই যুবকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল কাজলের বাপের বাড়িতে। প্রথমদিকে পরিবার বিষয়টি মেনে নিলেও পরবর্তীতে নানা কারণে অশান্তি বাড়তে থাকে। পুলিশের ধারণা, প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর শুরু হয় শত্রুতা, আর সেই প্রতিশোধ নিতেই হয়তো খুনের ছক আঁকার মূল কারণ। কিন্তু এখানেই নতুন প্রশ্ন, কাজলকে টার্গেট করা হলেও কেন প্রাণ হারাল তাঁর ছোট বোন এবং শিশুকন্যা? তদন্তকারীদের মতে, ওই দুই নাবালিকা হয়তো এমন কিছু দেখে ফেলেছিল বা জেনে গিয়েছিল, যা খুনিদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারত। সেই সম্ভাবনাই এখন পুলিশের নজরে।
রেল পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, একা কারও পক্ষে পরপর তিনটি খুন এবং পরে প্রমাণ লোপাটের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এই কারণে তদন্তকারীরা মনে করছেন, ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তাঁদের ধারণা, তিনজনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়, এরপর গাড়িতে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রেললাইনে, যাতে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হয়।
পুলিশের মতে, এই কাজ পেশাদার খুনিদের কৌশল নয়। পেশাদাররা সাধারণত প্রমাণ মুছে ফেলতে অন্য পদ্ধতি নেয়, কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য ছিল আত্মহত্যার ছবি তৈরি করা। ফলে তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও স্থানীয় চক্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনা। এখন পুলিশ খুঁজছে ঠিক কোন সময় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনজন, কার সঙ্গে শেষবার দেখা গিয়েছিল তাঁদের, এবং কীভাবে পৌঁছেছিলেন রেললাইনের কাছে। এর জন্য সুইসা ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, নিহতদের পরিচিত মহল, মোবাইল কল রেকর্ড এবং আর্থিক লেনদেনের দিকেও নজর দিচ্ছে তদন্তকারী দল। তদন্তের অগ্রগতিতে পুলিশের দাবি, প্রেম থেকে শত্রুতা এবং সম্ভাব্য ‘গোপন তথ্য জানার’ কারণে তিন খুনের এই ঘটনা ঘটতে পারে, যা এখন পর্যন্ত মামলার সবচেয়ে বড় মোড়।